নিউইয়র্কে স্কুল বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন বাংলাদেশি

ব্রেকিং নিউজ

ডেষ্ক রিপোর্ট

(৭ মাস আগে) ২৭ এপ্রিল ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৯:৪০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪৪ অপরাহ্ন

talktrain

মাত্র ৭ মাস আগে দালালকে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ট্যুরিস্ট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসে নিউইয়র্ক পাবলিক স্কুলের বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুরের সন্তান জুয়েল রানা (৪৩)। স্বপ্নের দেশে এসে এখন তাকে কফিন- বন্দি হয়ে ফিরতে হচ্ছে।
জুয়েল রানা বিদ্যুৎচালিত সাইকেলে (ইলেক্ট্রিক স্ক্রুটার) ডেলিভারি কাজের সময় ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ঈদের আগের দিন বিকাল সোয়া ৫টায় কুইন্স বুলেভার্ড এবং জ্যাকসন অ্যাভিনিউতে দুর্ঘটনার শিকার হন।
স্কুল বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন জুয়েল। সাইকেলটি চাকার নিচে পড়ে দুমড়ে-মুড়ছে গেছে। মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের বাংলা বাজার এলাকার জজ মিয়ার সন্তান জুয়েলের এক শিশু পুত্র ও কন্যা, স্ত্রী এবং মা-বাবা-ভাই-বোন রয়েছেন দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সাবেক সভাপতি শাহাদৎ হোসেন শুক্রবার সন্ধ্যায় জানান, ঘাতক বাস এবং তার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলার জন্যে ইউএস সুপ্রিমকোর্টের এটর্নি মঈন চৌধুরীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে এটর্নি মঈন চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে জানান, তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টাও করা হবে।
ময়নাতদন্তের পর জুয়েলের লাশ পাওয়া গেলেই বাংলাদেশে তার স্বজনের কাছে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এজন্যে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুন্সিগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সভাপতি মির্জা মনিরুজ্জামান শামীম ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মিন্টু।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে জুয়েল ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মোবাইল মেরামত-দোকানে মেকানিক্স ছিলেন। নিউইয়র্কে একটি স্টোরের কাজের পাশাপাশি ডেলিভারিম্যানেরও কাজ নিয়েছিলেন স্বজনের কাছে বেশি অর্থ প্রেরণের অভিপ্রায়ে।
উল্লেখ্য, গত ৭ বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে কমপক্ষে ৮ বাংলাদেশি ডেলিভারিম্যানের প্রাণ গেছে গাড়ির ধাক্কায় কিংবা দুর্বৃত্তের হাতে। সকলেই দালালকে মোটা টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
পুুলিশ জানায়, জুয়েল সাইকেল চালিয়ে লং আইল্যান্ড সিটির জ্যাকসন এভিনিউ ধরে দক্ষিণে যাবার সময় ইন্টারসেকশনে কুইন্স বুলেভার্ড (পূর্বদিক) গামী স্কুল বাসের ধাক্কা খান। বাসের ড্রাইভার সজোরে ধাক্কা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানায়। সাথে সাথে ছিটকে পড়েন জুয়েল। স্ক্রুটার বাসের চাকায় পিষ্ট হয়। সে সময় কংক্রিটের রাস্তায় রক্তাক্ত জুয়েল মুখ থুবড়ে ছিলেন। হয়তো তখনো বেঁচে ছিলেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা উল্লেখ করেন। সাথে সাথে এ্যাম্বুলেন্স এসে জুয়েলকে নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়েন ওয়েল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারে নেয়। কিছুক্ষণ পর হাসাতালের জরুরি বিভাগেই জুয়েলের প্রাণবায়ু উড়ে গেছে বলে তদন্ত কর্মকর্তারা উল্লেখ করেন। তদন্ত কর্মকর্তারা আশপাশের সিসিটিভি পরীক্ষার পর জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন যে, বাসটি গ্রীণ লাইট অতিক্রম করছিল। অপরদিকে জুয়েল রেড লাইটে ছিলেন। পুলিশের মতে মৃত্যুর জন্যে জুয়েলই দায়ী। তবে জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনেরা তা মানতে রাজি নন। তারা আইনী লড়াই চালাবেন।
অপরদিকে, অকুস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়েসী বাস ড্রাইভার। পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা করা হয়, তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন কিনা। পরীক্ষার রিপোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি নিউইয়র্কের পুলিশ। উল্লেখ্য, কুইন্সের এই ইন্টারসেকশনটি ২০১৪ সাল থেকেই মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত। গত তিন বছরে এখানে ১০৩টি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১০ সাইকেল-চালকসহ আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এরমধ্যে পথচারী ছিলেন ৪ জন। গাড়ির প্যাসেঞ্জার ৩৩ জন আহত হয়েছেন ওই দুর্ঘটনার সময়। নিউইয়র্ক সিটির সড়ক দুর্ঘটনা নিবন্ধনকারী সংস্থা ক্র্যাশমেপারের কাছে থেকে এ তথ্য জানা গেছে।